বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে যাঁরা শুধু নিজেকে নিয়ে সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং নিজের জ্ঞান, দর্শন ও প্রজ্ঞাকে মানবতার কল্যাণে নিবেদন করেছেন, তাঁদের নামই হয়ে ওঠে অনন্য। এমনই এক দৃষ্টান্ত স্থাপন কারীর নাম শায়খ মু. নুমান রিডার।
তিনি একাধারে আলেম, সুচিন্তক, গবেষক, লেখক, মোটিভেশনাল স্পীকার ও সফল উদ্যোক্তা। জ্ঞানের আলো মানবতার কল্যাণে ছড়িয়ে দেওয়া এবং বিনা এগ্রিমেন্টে গোটা পৃথিবী বিশ্বাস করবে এমন বিশ্বনাগরিক তৈরি করা তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।
এই জন্যই তিনি সর্বত্র “আইডিয়াল বিজনেস স্টাটাপ নীতি” ছড়িয়ে দেন দেশ দেশান্তর৷ আদর্শিক ব্যবসা স্টাটাপ ছাড়া জাতি মুক্তির বিকল্প পথ নেই আর সেটা নিয়েই চলছে বিশ্ব মহলে নতুন করে আলাপচারিতার ঢল৷
শিক্ষা ও দিক্ষার উজ্জ্বল যাত্রা
শায়খ নুমান রিডার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিম্ন মাধ্যমিক সমাপ্ত করেন যশোর জামিয়া কুরআনিয়া বকচর মাদ্রাসা থেকে এবং উচ্চ মাধ্যমিক চরমোনাই জামিয়া রশিদিয়া আহসানাবাদ থেকে৷ মাস্টার্স ও উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করেন দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি বিদ্যাপীঠ জামেয়া দারুল মা’আরেফ আল ইসলামিয়া, চট্টগ্রাম থেকে। সেখানে তিনি বিখ্যাত আরবী সাহিত্য ও হাদীস শাস্ত্রের বিশ্বপণ্ডিত, মহীরুহ শায়খ আল্লামা সুলতান জওক নদভী (রহ.) এর নিকট থেকে উচ্চতর অধ্যাপনা সম্পন্ন করেন এবং হাদীসের উচ্চ সনদ অর্জন করেন। গুরু-শিষ্যের এই সম্পর্ক শুধু শিক্ষা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং সুলতান জওক নদভীর চিন্তাধারা, প্রজ্ঞা, দূরদৃষ্টি ও দর্শন শায়খ নুমান রিডারের জীবন গঠনে এক অনন্য ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে।
রিডফোর্ড : এক বিশ্বদর্শনের আলোকবর্তিকা
শায়খ নুমান রিডারের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত রিডফোর্ড মাদ্রাসা আজ বাংলাদেশের এক ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি কেবল একটি মাদ্রাসা নয়; বরং একটি বিশ্বদর্শনের প্রতীক, যেখানে ইসলামী শিক্ষা, নৈতিকতা, আধ্যাত্মিকতা এবং সমসাময়িক জ্ঞানচর্চার সমন্বয় ঘটছে।
তিনি মনে করেন, শিক্ষা শুধু ধর্মীয় জ্ঞানে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না; বরং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় রিডফোর্ড আজ হয়ে উঠছে এক আলোকবর্তিকা, যেখানে শিক্ষার্থীরা শুধু আলেম হিসেবেই নয়, বরং দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন নেতা হিসেবে গড়ে উঠছে।
বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার একজন স্বপ্ন দ্রষ্টা
শায়খ নুমান রিডার বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে, শান্তি ও কল্যাণের বার্তা ছড়িয়ে দিতে ভ্রমণ করেছেন পৃথিবীর নানা প্রান্তে। তাঁর সফর করা দেশের তালিকায় রয়েছে— দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন, থাইল্যান্ড, মিশর, সৌদি আরব, ব্রুনাই, কাতার, কুয়েত, উজবেকিস্তান, কম্বোডিয়া, লাওস,, ভারত এবং চেচনিয়া সহ অসংখ্য দেশ।
এই দেশগুলোতে তিনি শুধু সফরই করেননি; বরং আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও ফোরামে অংশ নিয়ে বিশ্ব মুসলিম সমাজের সামনে ইসলামের শান্তিপূর্ণবাণী ও রিডফোর্ডের দর্শন তুলে ধরেছেন।
সাহিত্য ও ভাষায় অসাধারণ দক্ষতা
শায়খ নুমান রিডার যেমন মেধাবী, উদ্যমী, বিচক্ষণ এবং গভীর চিন্তাশীল, তেমনি তাঁর অনন্য প্রতিভার একটি অংশ হলো সাহিত্য চর্চা— বাংলা, আরবি, ইংরেজি ও উর্দু ভাষার দখল অসাধারণ৷ তিনি কেবল ভাষাতেই পারদর্শী নন, তাঁর আলোচনায় যেমন থাকে যুক্তির দীপ্তি, তেমনি থাকে ভাষার শিল্পসুষমা, তাঁর প্রাঞ্জল, সাহিত্যমণ্ডিত বক্তৃতা, হৃদয়গ্রাহী বাগ্মিতা এবং যুক্তিনির্ভর দৃষ্টিভঙ্গি যা শ্রোতাদের বিমোহিত করে৷ তিনি শুধু ইসলামিক আলোচনা করেন না; বরং আধুনিক সমাজ, অর্থনীতি, নেতৃত্ব, মানবিকতা ও শিক্ষার গুরুত্ব নিয়েও কথা বলেন। তাঁর কথায় ভেসে ওঠে হৃদয়ের পবিত্রতা, চরিত্রের সৌন্দর্যতা, কীর্তিকলাপের ঐশ্বর্য, চিন্তা ও চেতনার উচ্চতা, জ্ঞানের বিচরণ ভূমির প্রসস্থতা, আত্মার সজিবতা, উম্মাহর প্রতি দরদ ও ব্যথা৷
লেখালেখি ও গবেষণা
লেখালেখির মাধ্যমে তিনি জ্ঞান ও চিন্তাধারাকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিচ্ছেন। তাঁর প্রকাশিত জনপ্রিয় গ্রন্থটি হচ্ছে One To More One । এই বই পাঠকমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। পুস্তকটিতে এমন কিছু চিন্তাতত্ত্ব হাজির করেছেন, যা পাঠক শ্রেণীর দীর্ঘদিনের দুনিয়াবিমুখ দর্শনে প্রভাবিত হয়ে থাকার একপেশে গৎবাঁধা মত ও পথকে বদলে দেবে৷ এতে তিনি তুলে ধরেছেন জীবনের বিভিন্ন বাস্তবতা, প্রেরণা, চিন্তা-চেতনা এবং সমাজ গঠনের দর্শন। ইসলামি অর্থনীতি, সামাজিক সংস্কার, শিক্ষার আধুনিকায়ন ও মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে তাঁর গবেষণা নতুন প্রজন্মকে ভাবনার নব দিক উন্মোচন করে দিচ্ছে।
বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব
শায়খ নুমান রিডার শুধুই একজন আলেম নন। তিনি একজন চিন্তাবিদ, গবেষক, লেখক, মোটিভেশনাল স্পীকার ও ব্যবসায়ী। ব্যবসার ক্ষেত্রেও তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। তিনি মনে করেন, ব্যবসা শুধু মুনাফার জন্য নয়; বরং নীতি নৈতিকতা ও মানবতার কল্যাণ নিশ্চিত করার মাধ্যম৷
অনুপ্রেরণার বাতিঘর
তাঁর নেতৃত্ব ও দর্শনে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশ-বিদেশ থেকে হাজারো ধর্মপ্রাণ মুসলিম রিডফোর্ডের আঙিনায় সমবেত হচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি যেমন একজন শিক্ষক, অনুসারীদের কাছে তেমনি একজন দিকনির্দেশক, আর সমাজের কাছে এক অনন্য প্রেরণার নাম।
তাঁকে ঘিরে যে আবহ সৃষ্টি হয়েছে তা শুধু শিক্ষার নয়, বরং এক নৈতিক ও আধ্যাত্মিক আন্দোলনের। তাঁর চিন্তা, কর্ম ও নেতৃত্ব আজকের সমাজে দিশাহীন তরুণদের জন্য এক আশার আলো।
শায়খ নুমান রিডার নিঃসন্দেহে আধুনিক সময়ের দৃষ্টান্তপ্রতিম মনীষী। তিনি যেন একটি কলম, একটি কণ্ঠ, একটি বাতি—যা অন্ধকার দূর করে আলোর পথ দেখায়। ইসলাম, শিক্ষা, মানবতা ও নেতৃত্বকে একসঙ্গে মেলবন্ধন ঘটিয়ে তিনি বিশ্ব সমাজের সামনে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন, তা আগামী প্রজন্মের জন্যও এক অনন্য প্রেরণা হয়ে থাকবে।
আজকের পৃথিবীতে যখন বিভক্তি, সহিংসতা ও দিকহীনতা বাড়ছে, তখন শায়খ নুমান রিডার শান্তির বার্তা, জ্ঞানের আলো ও নৈতিকতার দিকনির্দেশনা দিয়ে প্রমাণ করছেন—একজন মানুষও পরিবর্তনের অগ্রদূত হতে পারে। তিনি মুসলিম উম্মাহকে মুসলিম পরিচয়কে ধারণ করে এক হওয়ার আহবান করেন৷ তাঁর জীবন, দর্শন ও নেতৃত্ব নিঃসন্দেহে দিকহারা মুসলিম উম্মতের জন্য অমিয় সুধা৷
এ ছাড়াও মানবতার কল্যাণে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন রিডফোর্ড ফাউন্ডেশন নামে একটি সমাজ কল্যাণ তহবিল, প্রতিষ্ঠার পর থেকে উক্ত ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন৷
